Tuesday, February 4, 2020

ঘুরে আসুন শান্ত শ্যামল নড়াইলে

 
সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন জনপদ নড়াইল জেলা শ্যামল সবুজ প্রান্তর, ইছামতি, চাচুড়ীসহ অসংখ্য বিলের জলধারা, মধুমতি, চিত্রা আর নবগঙ্গা নদী বেষ্টিত খুলনা বিভাগের একটি জেলা। যাত্রাগান, পালাগান, কবিগান, জারিগান, গাজিরগান, বৃষ্টির গান, নৌকাবাইচ, হাডুডু খেলা, লাঠি খেলা, ষাড়ের লড়াই, পিঠাপুলি ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী আয়োজনে উল্লেখযোগ্য এই জনপদ। 
 

নড়াইল জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থান গুলো হলো; গোয়াল বাথান গ্রামের মসজিদ, কদমতলা মসজিদ, নালদীতে গাজীর দরগা, উজিরপুরে রাজা কেশব রায়ের বাড়ী, জোড় বাংলায় রাধাগোবিন্দ মন্দির, লক্ষ্মীপাশায় কালিবাড়ী, নিশিনাথতলার বড়দিয়াতে মঠ, চাপাইল সেতু, নিরিবিলি পিকনিক স্পট, অরুনিমা ইকো পার্ক ইত্যাদি।
চিত্রা নদীর পাড়ে জমিদারদের বাধাঘাট
এছাড়া বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান’র শিশু স্বর্গ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের বাসভবন, নড়াইল জমিদার বাড়ী সর্বমঙঘলা কালী বাড়ী, জমিদার বাবুদের চিত্রা নদীর পাড়ে বাধা ঘাট, গোবরার ভোদরের মাছ ধরার দৃশ্য, অপরদিকে পানিপাড়া গ্রামে নানা প্রজাতির লক্ষ লক্ষ পাখির কলকাকলি। এছাড়াও নৌকায় চড়ে, সুইমিং পুলে সুইমিং করে, লেক থেকে মাছ ধরে, নৌকায় চড়ে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার, লেকের পাড়ে বসে সূর্য উদয় এবং সূর্য অস্ত উপভোগ করতে পারেন। নৌকায় চড়ে পাখি এবং প্রকৃতির খুব কাছে গিয়ে ছবি তুলতে পারেন।
স্বপ্নবিথি
স্বপ্নবিথি পার্ক
কাঠের তৈরি ঘর, শ্যালেট, বোটহাউজ, নৌকার উপর ভাসমান কটেজসহ থাকার জন্য রয়েছে আধুনিক সব কটেজ। এছাড়াও আধুনিক সুযোগ সুবিধাসহ চিত্রা কনফারেন্স হল ও এস এম সুলতান লাউঞ্জ নামক দুটি কনফারেন্স রুম রয়েছে। ধর্ম পালনে নামাজ আদায়ের জন্য রয়েছে সুন্দর ব্যবস্থা। রয়েছে নিজস্ব রেস্টুরেন্ট ব্যবস্থা, উৎপাদিত শাকসবজি, মাছ,ফলমূল সহ ফ্রেশ ফুড অতিথিদেরকে সরবরাহ করছে কর্তৃপক্ষ । রয়েছে বেসরকারি পর্যায়ে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশনের এফিলেশন প্রাপ্ত গলফ ক্লাবে গলফ খেলার ব্যবস্থা। এছাড়াও আর্চারি, ক্রিকেট, ফুটবল, কাবাডিসহ নানা ধরনের খেলাধুলার ব্যবস্থা।
নিরিবিলি পিকনিক স্পট (মফিজ পার্ক)
জেলার কালিয়া উপজেলার পানিপাড়া গ্রামে গড়ে উঠেছে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত একটি ইকোপার্ক যার নাম অনরুনিমা ইকোপার্ক।
এখানে গাছের ছায়ায় পাখির গান শুনতে শুনতে জলের ধারে অনায়াসে কাটিয়ে দেয়া যায় অনেকটা সময়। আবহমান গ্রামবাংলার চিরচেনা রূপ আর আধুনিকতার সুপরিকল্পিত সমন্বয় ঘটানো হয়েছে এখানে। ব্যস্ত শহুরে জীবনের বাইরে এসে বুক ভরে একটু নিঃশ্বাস নেয়ার এমন সুযোগ এদেশে খুব বেশি একটা নেই । ইচ্ছে থাকলে দেশের অবহেলিত পাড়া গাঁয়েও সৃষ্ট করা যায় মনের মাধুরী মেশানো কোন এক স্বপ্নপুরী।
চারপাশে সবুজ মাঠ, এ মাঠ পেরিয়ে যেখানে প্রকৃতি আর পাখিদের সমারোহ। মনে হয় সোনালি সাগরের পারে সবুজে সবুজে ভরা প্রকৃতি আমাদের জন্য নতুনভাবে সেজেছে। ইট পাথরের ভিড়ে কর্মের ব্যস্ততায় শরীর এবং মন খানিকটা অলস হয়ে যায়। শরীরের কর্মশক্তি ফেরানোর জন্য ও ভ্রমণ প্রয়োজন। সকল ব্যস্ততা ভুলে কিছুটা সময় নিজেকে, বন্ধু-বান্ধব, পরিবারকে নিয়ে ঘুরে এলে মন প্রফুল্লিত হবে।
অরুনিমা ইকোপা
সৌখিন মৎস্য শিকারিরাও আসতে পারেন এখানে মৎস্য শিকারে শিশু-কিশোরদের জন্য রয়েছে অল্প পানিতে মাছ ধরার ব্যবস্থা, সুইমিং, দোলনা, ঘোড়ায় চড়ার ব্যবস্থাসহ আরো অনেক এক্টিভিটি। আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায় জানান, দীর্ঘ ১ যুগের বেশি সময় ধরে শত প্রজাতির হাজার হাজার বৃক্ষ রোপণ করে শিল্পীর মতোই তিলোত্তমা করে সাজানো হয়েছে। প্রকৃতি এবং পাখিকে একসাথে কাছে পেতে,নিরিবিলি পরিবেশ ও সতেজতা উপভোগ করতে চলে আসতে পারেন। নানা প্রজাতির লক্ষ লক্ষ পাখির কলকাকলি আপনার মন ভরে তুলবে।
কীভাবে যাবেন:
নড়াইল জেলায় অবস্থিত হলেও গোপালগঞ্জ শহর থেকে খুব কাছেই এর অবস্থান। গোপালগঞ্জ থেকে ড্রাইভিং দূরত্ব মাত্র ৪৫ মিনিটের।
এ ছাড়া গোপালগঞ্জ শহর থেকে নিজস্ব গাড়ি নিয়েও যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে সড়ক পথে সরাসরি গোপালগঞ্জ অথবা নড়াইল আসতে হবে। গোপালগঞ্জ বা নড়াইল আসতে গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, গাবতলি কাউন্টার থেকে বিভিন্ন পরিবহনের এসি নন এসি সব ধরনের বাস পাওয়া যায়।
গোপালগঞ্জ শহর থেকে ড্রাইভিং দূরত্ব মাত্র ৪৫ মিনিটের। গোপালগঞ্জ শহর থেকে রেন্ট এ কার নিতে পারেন। এ ছাড়া ঢাকা থেকে বিমানে চড়ে যশোর হয়েও নড়াইলের পানিপাড়ায় যাওয়া যায়। ডে ট্যুর প্যাকেজের মাধ্যমে আশে-পাশের বাড়তি বিভিন্ন দর্শনিয় স্থান ভ্রমণ করিয়ে দিয়ে থাকে।
যেমন টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার, বাগেরহাটে খান জাহান আলির মাজার ও ষাট গম্বুজ মসজিদ। কদলা মঠ, এস এম সুলতান শিশু স্বর্গ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের বাসভবন, গোবরার ভোদরের মাছ ধরার দৃশ্য, কুষ্টিয়ার লালন শাহের মাজার, কুষ্টিয়ায় রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি ইত্যাদি। চাইলে সুন্দরবনও ঘুরে আসতে পারেন।

No comments:

Post a Comment